সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট দিল্লিকে আট সপ্তাহের মধ্যে পথকুকুরমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। পথকুকুরদের আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো, খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং দেখভালের জন্য কর্মী নিয়োগের কথা বলা হলেও, রায়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে উঠেছে প্রবল প্রতিবাদের ঝড়। পশুপ্রেমীদের মতে, পথকুকুরকে বন্দী করা অমানবিক ও অনৈতিক। মানুষের সহাবস্থানের ইতিহাসে তারা সবসময়ই আমাদের সমাজ ও ইকো-সিস্টেমের অংশ হয়ে থেকেছে।
পশুপ্রেমীরা আশঙ্কা করছেন, এত বিপুলসংখ্যক কুকুরের জন্য আশ্রয় ও খাবারের সুব্যবস্থা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। বরং ভয়, কুকুরদের কদর্য ক্যাম্পে আটকে রেখে অমানবিক অবস্থায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে কোনো সমাধান হবে না। বরং কয়েক বছরের মধ্যেই কুকুরের সংখ্যা আবারও বেড়ে যাবে। উপরন্তু, কুকুর নিধন হলে ইঁদুরের সংখ্যা ভয়ঙ্করভাবে বাড়তে পারে, যা মানুষের জন্য মহামারির ঝুঁকি তৈরি করবে।
তাদের মতে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সমাধান হল — স্টেরিলাইজেশন, ভ্যাক্সিনেশন ও মুক্তি। কুকুরদের নির্বীজকরণ ও টিকাকরণের মাধ্যমে তাদের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাবে এবং রোগ সংক্রমণের আশঙ্কাও শূন্যে নেমে আসবে। এই ব্যবস্থার খরচ, আশ্রয় তৈরির বিপুল ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
এই ভাবনাকেই সামনে রেখে রবিবার শ্রীরামপুরে পথে নামলেন পশুপ্রেমীরা। আশ্রয় হোম এন্ড হসপিটাল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত পদযাত্রায় অংশ নিলেন শতাধিক মানুষ। শ্রীরামপুর বটতলা থেকে মাহেশের রথ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই পদযাত্রায় হাতে ছিল পোস্টার, লিফলেট, স্লোগানে মুখরিত ছিল রাস্তাঘাট।
শ্লোগান ওঠে — “বিষ নয়, খাবার দাও”, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস”, “অবলাদের কথা বল, পৃথিবীকে বাঁচিয়ে তোলো”। মাহেশের রথের সামনে দাঁড়িয়ে অংশগ্রহণকারীরা শপথ নিলেন, আজীবন অবলাদের পাশে থাকার।
এই পদযাত্রা শুধু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদ নয়, বরং এক মানবিক আহ্বান— পৃথিবী শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণীর জন্যই।