হরিপাল, হুগলি | ৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার:
অলবেঙ্গল মাইনোরিটি অ্যাসোসিয়েশন (আ.বা.মা.র)-এর উদ্যোগে হরিপালের গবাটিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক সেমিনার। সেমিনারের মূল বিষয়বস্তু ছিল — "বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী?" যেখানে উপস্থিত ছিলেন আলেম, উলামা, ইমাম, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সেমিনারে বক্তারা বর্তমান দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বক্তৃতায় উঠে আসে, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য একটি হিংসাত্মক পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে সাধারণ মানুষকেই বলি হতে হচ্ছে।
এসআইআর নিয়ে সতর্ক বার্তা
বক্তারা জানান, এসআইআর (SIR) চালু হওয়ার প্রক্রিয়া খুব শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। এই প্রেক্ষিতে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে এখন থেকেই কাগজপত্র, নাম, ঠিকানা, বানান ইত্যাদি সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতার সম্মুখীন না হতে হয়।
একইসঙ্গে, প্রত্যেক নাগরিককে পাসপোর্ট তৈরি করে রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়পত্র ও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে কাজে আসবে।
বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, কিছু রাজনৈতিক পক্ষ এসআইআর-কে ঘিরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, অথচ এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বক্তৃতায় স্পষ্টভাবে বলা হয়, এসআইআর কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয় এবং এটি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে আইনগতভাবে সচেতন ও প্রস্তুত থাকতে হবে।
সতর্কতা ও সংহতির আহ্বান
সামনে নির্বাচন আসায় বক্তারা আহ্বান জানান, কেউ যেন কোনো ধরনের উসকানিতে পা না দেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেন।
এছাড়া, বক্তারা বলেন— "মরছে মুসলমান, মারছে মুসলমান— এই আত্মবিধ্বংসী পথে আর না এগিয়ে মুসলমান সমাজকে এখনই সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।"
কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সেমিনারে কেন্দ্রীয় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার একপাক্ষিক নীতি অনুসরণ করছে এবং কিছু জনপ্রতিনিধি একটি সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ সরকার এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ওয়াকফ ও ধর্মীয় সম্পত্তি রক্ষার বার্তা
জামায়াতে ইসলামী হিন্দের হুগলি জেলার নাজিম সৈয়দ সাইফুল্লাহ সাহেব ওয়াকফ সম্পত্তি, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থানের খতিয়ান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তিনি জানান, বর্তমানে এসব ধর্মীয় সম্পত্তিকে জবরদখলের প্রক্রিয়া সুগম করার চেষ্টা চলছে, যা রুখতে সকলকে সজাগ ও সক্রিয় হতে হবে।
সভা পরিচালনা ও সমাপ্তি
সভার সভাপতিত্ব করেন অলবেঙ্গল মাইনোরিটি অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি আবু আফজাল জিন্না। সঞ্চালনা করেন সহ সম্পাদক তালহা আব্বাসী।
বিশেষ বক্তা হিসেবে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আ.বা.মা.র নাজিবুল হক মল্লিক, ইউসা আব্বাসী (আব্বাসীয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক), কাজী গিয়াসুল ইসলামসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
দেশবাসীর শান্তি, সংহতি ও কল্যাণ কামনা করে এই গুরুত্বপূর্ণ সভার সমাপ্তি হয়।