হাওড়া পৌরনিগমে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, গাছ ভেঙে চাপা পড়ে মৃত্যু ২ কর্মীর— উত্তপ্ত প্রশাসনিক মহল ও রাজনৈতিক মহল

হাওড়া: সাতসকালে শহর জুড়ে নেমে এল শোকের ছায়া। মঙ্গলবার সকালে হাওড়া পৌরনিগম চত্বরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ও চাঞ্চল্যকর দুর্ঘটনা। মুখ্য পৌর প্রশাসকের দফতরের সামনে আচমকাই ভেঙে পড়ল একটি দীর্ঘদেহী ইউক্যালিপটাস গাছ। গাছটির নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুই পৌরকর্মীর— উমেশ মাহাতো এবং নুর মহম্মদের। উমেশ একজন স্থায়ী কর্মী এবং নুর অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন হাওড়া পৌরনিগমে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুদিন ধরেই গাছটি হেলে পড়ে ছিল। গাছের অবস্থা বিপজ্জনক ছিল বলেও দাবি করছেন সহকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পৌরকর্মীরা বলছেন, ‘‘এই গাছটির স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। রোজ যাতায়াত করতে ভয় লাগত। অফিস টাইমে যদি এই দুর্ঘটনা ঘটত, তাহলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।’’

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ হঠাৎই বিকট শব্দ করে গাছটি ভেঙে পড়ে। সেই সময় অফিস প্রাঙ্গণে ছিলেন উমেশ ও নুর। গাছের বিশাল ডালপালা ও কাণ্ডের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় হাওড়া থানার পুলিশ এবং পৌরনিগমের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকরা। দু’টি দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে গাছ সরানোর কাজ শুরু করেন। ঘটনাটি হাওড়া পৌরনিগমের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল।

ঘটনার জেরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সহকর্মীদের মধ্যে। প্রশাসনিক স্তরে যেমন তৎপরতা শুরু হয়েছে, তেমনই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। স্থানীয় বিজেপি নেতা উমেশ রাই সরাসরি পৌরনিগমের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘এটা প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা নয়। বহুদিন ধরে গাছটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা জানানো হয়েছিল। পৌরনিগম কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আজ যদি ঝড়বৃষ্টির মধ্যে এই ঘটনা ঘটত, বুঝতাম। কিন্তু পরিষ্কার দিনে এমন দুর্ঘটনার দায় কে নেবে? এই মৃত্যুর জন্য পৌরনিগমকেই দায় নিতে হবে।’’

অন্যদিকে, হাওড়া পৌরনিগমের পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গাছটি সজীব ছিল। ভেঙে পড়ার মতো কোনও লক্ষণ চোখে পড়েনি। এই ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সরকারিভাবে মৃত কর্মীদের পরিবারকে সাহায্য করব। সমস্ত সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।’’

তবে এত বড় গাছ দীর্ঘদিন ধরে হেলে ছিল, তা সত্ত্বেও কোনও সতর্কতা নেওয়া হল না কেন— এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শহরবাসী ও পৌরনিগম কর্মীদের মুখে। কেবল মানবিক ক্ষতি নয়, প্রশাসনিক অবহেলার চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই ঘটনায়।

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে— একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও কীভাবে এত বড় একটি ঝুঁকিপূর্ণ গাছের রক্ষণাবেক্ষণ বা কাটা হয়নি? কতটা সজাগ ও দায়িত্ববান পৌর প্রশাসন? হাওড়া পৌরনিগমের ভিতরে কর্মীদের নিরাপত্তা কি আদৌ সুনিশ্চিত?

দুই কর্মীর মৃত্যু শুধু একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং এটি এক করুণ সতর্কবার্তা— সময় থাকতে সতর্ক না হলে পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার এক নির্মম উদাহরণ।

Sk Zabihullah

সেখ জাবিহুল্লাহ একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক, পেশাদার সম্পাদক ও দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনার। তিনি নির্ভুল তথ্য বিশ্লেষণ, চমৎকার সম্পাদনা এবং সৃজনশীল ডিজাইনের মাধ্যমে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরেন। তার লেখনীতে থাকে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি ও পাঠকের হৃদয় ছোঁয়ার মতো গভীরতা। গ্রাফিক ডিজাইনে তিনি নান্দনিকতা ও কার্যকারিতার অপূর্ব সমন্বয় ঘটান। সাংবাদিকতা ও সৃজনশীল জগতে তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Type Your Valuable Feedback.
Keep Supporting. Flow as on YouTube & Facebook.

নবীনতর পূর্বতন